Sunamgonj Trip 2017
গতবছরের অগাষ্টে (২০১৬) এ সুনামগঞ্জে ট্যুরের পর সুনামগঞ্জ এতোই ভালো লেগেছিলো তখনই ঠিক করেছিলাম আবার যাবো সুনামগঞ্জ! বলা যায় একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিলও কিন্তু ফাইনালী প্রায় একবছর পরে আবার গেলাম আর সাথে সাথে বউ এর কাছে কথা শুনলাম কি মজা পাও নৌকাতে থেকে! আর আম্মু তো ভয়াবহ ভাবে বল্লো কি শুরু করলি এই বুড়া বয়সে এই সব!! 😑 লাইফে প্রথম মনে হয় আমাকে বুড়া বল্লো 😑 ওয়েল অনেক টেনশনেই ছিলাম যাবো কি যাবো না, কারন বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নানান ধরনের কথা শুনছিলাম, পানির লেভেল নাকি বেড়ে গেছে, আর বন্যা পরিস্থিতির কারনে নানান এলাকাতে মানুষ কষ্টে আছে, তাই আগে ভাগেই ভালো করে খবর নিলাম, না! সুনামগঞ্জে সমস্যা হয় নাই, আর যা শুনেছিলাম যে ঢলের পানির কারনে হাওড়ের পানি ঘোলা হয়ে গেছে অনেকটা ভুল প্রমানিত হয়েছে যাওয়ার পর দেখলাম! গতবারে আমাদের তিনজনের জন্যই প্রথম যাওয়া ছিলো, প্লাস সময় কিছুটা কম হাতে নিয়ে গিয়েছিলাম আর প্রথম দিন আমাদের নৌকার ইঞ্জিনে সমস্যার কারনে ওভার অল তাড়ায় ছিলাম, তাই এবার প্ল্যান ছিলো রিল্যাক্স ট্যুর দেবো পাক্কা পুরো দুইটা দিন রেখেছিলাম সুনামগঞ্জের জন্য :3 :3 আর রিল্যাক্সের প্রথম শর্ত পূরন করতে গিয়ে এবার নন এসিতে না গিয়ে শ্যামলির এসি বাসে গিয়েছিলাম। ** ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ শ্যামলি এসি ৮০০ টাকা পার হেড। আর নন এসি বাস ভাড়া ৫৫০ টাকা পার হেড। রাত ১০ঃ৪৫ এর বাস ঢাকা ছাড়তে ছাড়তেই হয়ে গেলো ১২ঃ৩০ টার মত 😑 প্লাস বৃষ্টির কারনে সুনামগঞ্জ পৌছাতে আমাদের ঘড়ির কাটা ছুলো ৮ টা! বেশ ভালোই লেট হয়েছে আগের বারের তুলনায়! আর যথারীতি গতবারের মত বাস থেকে নেমেই পেলাম বৃষ্টি 😑 মন খারাপ ভালো মিক্সড কারন সি এন জি ড্রাইভার বল্লো গত দুই দিন বৃষ্টি হচ্ছে 😞 মনের ভেতর ভয় প্লাস মন খারাপ হয়ে গেলো 😞 পুরাই ধরা খাবো 😑 ওয়েল সুনামগঞ্জে বাস থেকে নেমে সি এন জি রিজার্ভ নিলাম তাহিরপুর বাজার পর্যন্ত। নরমালি ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও, মুলামুলি করে ৪৫০ এ গিয়েছিলাম :3 ** সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সি এন জি রিজার্ভ ৪৫০ – ৫০০ টাকা তাহিরপুর পৌছিয়ে নাস্তা করে নিলাম বাজারে, দাম তেমন একটা বেশি না, পরোটা, ডাল, চা, পানি খেয়েছিলাম। ** নাস্তা পার হেড ৫০ টাকার মত নাস্তা পানি খেয়েই মিশন নৌকা ভাড়া করা। ওরা বেশ স্ট্রং সিন্ডিকেট! হিসেব কিতেব করেই নৌকা ঠিক করতে হবে, বেস্ট হয়ে হল সবাই না গিয়ে চালাক চতুর একজন আলাদা গিয়ে কথা বলে মুলা মুলি করা। আমাদের গতবারের মাঝিকে আমরা পেয়েছিলাম, কিন্তু ইচ্ছা করেই ওকে আমরা নেই নাই, তাই নতুন নৌকার খোজে ছিলাম, দুই ধরনের নৌকা পাওয়া যায়, যেহেতু আমরা মাত্র ৩ জন তাই আমরা বড় নৌকা নেওয়ার কোন মানেই হয় না, মাঝারি নৌকা দরদাম করে একজনকে ঠিক করলাম। নৌকার সময় যেই দিন গিয়েছি সেই দিন সকাল থেকে সারাদিন ঘোরা, রাতে থাকা, নৌকাতে রান্না বান্নার ব্যাবস্থা, প্লাস রান্না করে দেওয়া, রাতে নৌকাতেই থাকার ব্যাবস্থা করা, প্লাস সেকেন্ড ডে তে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকাতে ঘোরা, কিছু স্পট আমরা ঠিক করে দিয়েছিলাম মাঝি সেই হিসাবেই রুট প্ল্যান করেছিলো। ** দুই দিনের নৌকা ভাড়া ছিলো ৪০০০ টাকা, কাভার করবে হাওড়, ওয়াচ টাওয়ার, বারেকের টিলা, নীলাদ্রী, যাদুকাটা নদী, শিমুল তুলার বাগান। খাওয়া দাওয়া নিজেদের চয়েজ মত নিয়ে নেওয়া উচিত, বাজার ও তেমন করে করা উচিত। দুইবারের যাওয়ার এক্সপ্রেরিয়ান্স থেকে নিচের রুট ম্যাপটা সাজেস্ট করবো, আমার কাছে এটা বেস্ট মনে হয়েছে সুনামগঞ্জের জন্য। প্রথম তাহিরপুর বাজারে নাস্তা আর বাজার সদাই করে আনুমানিক নৌকাতে উঠতে উঠতে বাজবে ১১ঃ০০ এর মত, – প্রথমেই চলে যাওয়া উচিত শিমুলতলা, যাদু কাটা নদী হয়ে শিমুল তলা যেতে হবে, অসাধারন প্ল্যান করে বানানো বাগান আসলেই খুবই ভালো লাগবে, যদিও এখন শিমুলফুল নাই কিন্তু তারপর ও ভালো লাগবে, প্রতিটা গাছের মাঝে এতো নিখুত জ্যামেতিক গ্যাপ অসাধারন। -শিমুল বাগানে সময় কাটিয়ে দুপুরের গোসল করা যায় যাদুকাটা নদীর পাড়েই, কিন্তু তা অবশ্যই মাঝির সাজেশন মতে, কারন যাদুকাটা নদীর পাড়ে চোরা খাদ থাকে, তাই রিস্কি। – ওখানে গোসল দ্যান লাঞ্চ করে চলে যাওয়া উচিত ডাইরেক্ট নীলাদ্রিতে! যদিও বারিকের টিলা আর একটু সামনে গেলেই! বারিকের টিলাতে যাওয়া আমাদের কাছে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নাই, জাস্ট সময় নষ্ট কিন্তু তারপর ও কেউ যেতে চাইলে যেতে পারেন, আমরা গিয়েছিলাম, আর সময় নষ্ট করেছিলাম আর এই কারনেই বিকেলের নীলাদ্রী দেওয়ার সুযোগ মিস করেছি, ওয়েল প্ল্যান মতে, যাদুকাটা নদীতে গোসল আর লাঞ্চ করেই ডাইরেক্ট চলে যাওয়া উচিত টেকেরঘাট! ওখানে নৌকা ভিড়াতে হবে কারন রাতের বেলা অনেক গুলো নৌকা ওখানেই থাকে, প্লাস পাশেই বি জি বি এর ক্যাম্প, ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস! সো সিকিউরিটির কোন সমস্যা নাই সো আমরা যদি সন্ধ্যা হওয়ার ঘন্টা খানেক আগেই টেকেরঘাট পৌছাতে পারি ওখানে তা হলে উপভোগ করতে পারবো নীলাদ্রী লেকের অসাধারন সৌন্দর্য্য! অনেকে একে বাংলাদেশের সুইজারল্যান্ড বলে :3 সুইজারল্যান্ড যাই নাই কিন্তু খুব একটা খারাপ ও না এক কথায় অসাধারন! ঠান্ডা পরিবেশ অসাধারন লাগবে নীলাদ্রী লেক আর তার আশেপাশের জায়গা! টেকেরঘাট থেকে হেটে গেলে ৫-১০ মিনিট। সন্ধ্যা নেমে এলে ওখানে বাজারে বা এদিক ওদিক হেটেও সময় কাটানো যায়, আর নিজেদের নৌকাও আছে। প্রথমদিনের ঘোরাঘুড়ি শেষ এখন সেকেন্ড ডে! হাওড়ে মাঝে নৌকাতে ঘুমানোর ফিলিংস কোন ভাবেই প্রকাশ করার মত না, যতক্ষননা নিজে কেউ যাচ্ছে স্পেশালি ভোর হতে দেখতে পারাটা! এক কথায় অসাধারন! সেকেন্ড ডে সকালের নাস্তা পানি শেষ করে নীলাদ্রী লেকে ঘুরতে চাইলে আরো কিছু সময় ঘুরে দ্যান রওনা হতে হবে টাওঙ্গের হাওড়ের দিকে! এর আগে অবশ্য বাগলিতেও যাওয়া যায়, আমরা এবার যাই নাই গতবার গিয়েছিলাম দেখে, খারাপ না, কিন্তু খুব একটা স্পেশাল কিছুও না, প্রথম বার হলে যাওয়া যেতে পারে, বাগলী হয়ে টাওংগরের হাওড়ে গিয়ে প্রথমেই ওয়াচ টাওয়ারে চলে যাওয়া যেতে পারে, ওয়াচ টাওয়ারে সময় কাটিয়ে তার একটু পাশেই কমপানিতে নেমে গোসল করা যেতে পারে। দ্যান লাঞ্চ ! এখন আপনার যদি ঢাকাতে ব্যাক করার তাড়া থাকে আপনি বিকেলের বাস ধরতে পারেন, আর তাড়া না থাকলে রাতের বাস!! দুপুরের দিকে ব্যাক করলে টাওঙ্গুরের হাওড়ে গোসল আর লাঞ্চের পরেই তাহিরপুর ব্যাক করতে সি এন জি করে বাস স্ট্যান্ডে চলে যেতে হবে আর তাড়া না থাকলে রিল্যাক্স মুডে গোসল খাওয়া দাওয়া হাওড়ে আরো ঘোরাফেরা করে সূয্যস্থ দেখে সুনামগঞ্জে গিয়ে রাতের বাসে ঢাকা ব্যাক করতে পারেন আমাদের এবারের মাঝিটা মোটামুটি বেশ ভালোই ছিলো, স্মার্ট, কর্মঠ, রান্নায় ভালো। তার নৌকা আমার মতে ৭-৯ জনের জন্য ওকে, কিন্তু রিল্যাক্স মুডের ট্যুরের জন্য আমার মতে ম্যাক্সিমাম ৪-৫ জন যেন ঘুমাতে বা শুতে প্রব্লেম না হয়, মাঝির নাম লোকমান, বিশ্বাসি, কর্মঠ আর স্মার্ট আছে। বেশ ভদ্র ও তার ফোন নাম্বারঃ 01736447984 (আমার নাম না বলে ওকে শামিমের রেফারেন্স দিলে সহজে চিনতে পারবে আর সার্ভিস ও ভালো দেবে :3 ) তার দুই দিনের প্যাকেজে উপরে উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও, রান্না, বিচানা, বালিশ, ইনক্লুডেড, ধন্যবাদ।